একবিংশ শতাব্দীতে আধুনিক বিজ্ঞানের এক বিষ্ময়কর আবিষ্কার হলো কম্পিউটার। একটু কল্পনা করে দেখুন, আপনার আশেপাশে যা কিছু রয়েছে তার প্রায় সবকিছু সৃষ্টির পিছনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই কম্পিউটারের অবদান রয়েছে। কম্পিউটার ছাড়া এই আধুনিক পৃথিবী যেন অচল!
কম্পিউটার কী?
কম্পিউটার (Computer) শব্দটি গ্রিক শব্দ Compute থেকে এসেছে। এর অর্থ গণনাকারী। মূলত কম্পিউটার সর্বপ্রথম আবিষ্কার হয়েছিল গণনাকারী যন্ত্র হিসেবে। প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে এই কম্পিউটার এখন শুধু গণনাকারী একটি ইলেক্টোনিক্স ডিভাইসই নয়, এটির তথ্য সংরক্ষণ, পুনরুদ্ধার এবং নির্দেশনা অনুযায়ী প্রক্রিয়াকরণ করারও ক্ষমতা রয়েছে৷ মোটকথা চার্লস ব্যাবেজের হাতে আবিষ্কৃত প্রথম গণনাকারী যন্ত্রটি বর্তমানে আধুনিক বিজ্ঞানের এক মধ্যমণি ডিভাইস হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কম্পিউটারের প্রকারভেদ
কম্পিউটারকে সাধারণত চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে –
1. Micro Computer
2. Mini/Midrange Computer
3. Mainframe Computer
4. Super Computer
আবার প্রযুক্তিগত দিক থেকে Micro Computer-কে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে –
1. Analog Computer
2. Digital Computer
3. Hybrid Computer
আমরা সাধারণত ডিজিটাল কম্পিউটার (Digital Computer) ব্যবহার করে থাকি। একে সংক্ষেপে Personal Computer বা PC বলা হয়ে থাকে।
কম্পিউটারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশের পরিচিতি
উপরে আমরা কম্পিউটার সম্পর্কে বেসিক ধারনা পেয়েছি। এবার আমরা কম্পিউটারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করবো।
১. মাদারবোর্ড (motherboard)
মাদারবোর্ড হলো একটি কম্পিউটারের প্রধান অংশ। মাদারবোর্ডের মাধ্যমেই কম্পিউটারের অন্যান্য হার্ডওয়্যারগুলো একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে কার্য সম্পাদনা করে থাকে৷ মাদারবোর্ডের ক্ষমতা যত বেশি থাকে অন্যান্য হার্ডওয়্যারগুলো এর থেকে ততবেশি সাপোর্ট পায় এবং খুব দ্রুত কাজ করতে পারে৷ তাই মাদারবোর্ডকে কম্পিউটারের ‘মা’ বলা হয়ে থাকে।
২. প্রসেসর (Processor)
প্রসেসর হলো একটি কম্পিউটারের প্রধান চালিকাশক্তি। এটি মাদারবোর্ডের মাঝখানে থাকে৷ এর প্রধান কাজ হলো যে কোনো ডাটাকে প্রসেস বা প্রক্রিয়াজাত করণের মাধ্যমে কাজের উপযোগী করে তোলা। এটি একটি গাড়ীর ইঞ্জিনের মতো কাজ করে। প্রসেসরের স্পিড যত বেশি হবে, তত স্পিডেই কম্পিউটার যে কোনো কাজ সম্পন্ন হবে।
৩. পাওয়ার সাপ্লাই (Power Supply)
একটি কম্পিউটার চালানোর জন্য নিশ্চয়ই পাওয়ারের প্রয়োজন হয়। এই পাওয়ার সাপ্লাইয়ের কাজই হলো একটি কম্পিউটারের প্রতিটি ডিভাইসকে সক্রিয় রাখার জন্য পরিমাণ মতো পাওয়ার সাপ্লাই দেওয়া।
৪. RAM (Random Access Memory)
RAM এর মূল কাজ হলো কম্পিউটার চলমান অবস্থায় প্রসেসরকে বারংবার তার কাজের কথা মনে করিয়ে দেওয়া।RAM এর সাইজ যত বড় হয়, RAM তত বেশি স্মৃতি ধারণ করে রাখতে পারে। মূলত এ কারনেই RAM যত বেশি হয় কম্পিউটার যেকোনো কাজ ততবেশি স্পিডে করতে পারে। কারণ RAM একসাথে অনেকগুলো কাজ মনে রাখে এবং প্রসেসরকে বার বার তা মনে করিয়ে দেয়, ফলে প্রসেসরও দ্রুত কাজগুলো করতে পারে৷ তবে মূল কাজটা কিন্তু প্রসেসরই করে থাকে।
Read More: কম্পিউটার RAM ও ROM কি এবং এদের মধ্যে পার্থক্য
৫. হার্ডডিক্স (Hard Disk Drive)
হার্ডডিক্স হলো কম্পিউটারের সংরক্ষণাগার। এখানে আপনি আপনার সকল ডাটা সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। এবং পূনরায় প্রয়োজন হলে সেখান থেকেই ডাটাগুলো সংগ্রহ করতে পারেন। হার্ডডিক্সে জায়গা যতবেশি হবে আপনি সেখানে ততবেশি ডাটা সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন।
Read More: হার্ডডিস্ক ডাটা রিকভারি কি? কীভাবে এবং কোথায় করবেন?
৬. গ্রাফিক্স কার্ড (Graphics Card)
গ্রাফিক্স কার্ডের কাজ হলো মনিটরের সাহায্যে যাবতীয় ডাটার আউটপুট সুন্দরভাবে ভিউ করা। অর্থাৎ আপনি যত ভালো মানের গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার করবেন আপনার কম্পিউটারের মনিটর ততবেশি চকচকে হয়ে আপনার সামনে শো করবে। যারা মূলত গ্রাফিক্সের কাজ করে এবং হাই কোয়ালিটি রেজুলেশনের গেম খেলে তারাই গ্রাফিক্স কার্ড বেশি ব্যবহার করে থাকে।
৭. ডিভিডি রাইটার (DVD Writer)
ডিভিডি রাইটারের প্রধান কাজ হলো কোনো ডাটা কপি করে হার্ডডিক্সে সংরক্ষণ রাখা। এছাড়াও কোনো সফটওয়্যার ইন্সটল করতে, উইন্ডোজ দিতেও ডিভিডি রাইটারের প্রয়োজন হয়৷ তবে বর্তমানে পেনড্রাইভের বহুল ব্যবহারের জন্য CD বা DVD রাইটারের ব্যবহার অনেকাংশে কমে গিয়েছে।
৮. মনিটর (Monitor)
সাধারণত কম্পিউটারের কাজ করার ক্ষমতার সাথে মনিটরের কোনো সম্পর্ক নেই। মনিটর ছাড়াও কম্পিউটার তার কাজ পরিচালনা করতে সক্ষম। তবে ব্যবহারকারীর সুবিধার্থে ও সঠিকভাবে মনিটরিং করার জন্য মনিটরের প্রয়োজন হয়৷ আমরা কম্পিউটারের যাবতীয় আউটপুট মূলত মনিটরের মাধ্যমেই দেখতে পারি।
৯. কীবোর্ড (Keyboard)
কম্পিউটারের অন্যতম ইনপুট হার্ডওয়্যার হলো কীবোর্ড। এর মাধ্যমেই আমরা টাইপ করে কম্পিউটারকে বিভিন্ন ইন্সট্রাকশন দিয়ে থাকি। সে অনুযায়ী কম্পিউটার তার কাজ করে থাকে।
১০. মাউস (Mouse)
কীবোর্ডের মতোই আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইনপুট হার্ডওয়্যার হলো মাউস। কীবোর্ডে যেমন টাইপ করার মাধ্যমে কম্পিউটারকে ইন্সট্রাকশন দেওয়া হয় তেমনি মাউস দিয়ে ক্লিক করার মাধ্যমে যাবতীয় ইন্সট্রাকশন দেওয়া হয়ে থাকে।
এছাড়াও কম্পিউটারে টুকিটাকি আরো বেশকিছু যন্ত্রাংশ রয়েছে, যা দ্বারা আরো বিভিন্ন কার্য সম্পাদনার ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়।
Read More: ডাটা রিকভারি কি, কেন এবং কিভাবে কাজ করে?
1 thought on “কম্পিউটারের সকল যন্ত্রাংশের নাম ও পরিচিতি”
nice article about computer parts
thanks