আর মাত্র কিছু বছর আগে ও প্রযুক্তি এত বেশি কমপ্লিকেটেড ছিল না। প্রযুক্তি বলতে সাধারনত একটা তার ওয়ালা টেলিফোন কিংবা অ্যান্টেনা ওয়ালা একটা টেলিভিশনকে বুঝতে। বুঝছি তো কিন্তু ২০০০ সালের পর থেকে প্রযুক্তিতে যে অভাবনীয় পরিবর্তন এসেছে তার আসলেই অবাক করার মত। এমন সব অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে আমরা পরিচিত হয়েছি একটা সময় মানুষ কখনো কল্পনাও করতে পারেনি। আজকে আমরা ওই প্রযুক্তির অভাবনীয় অংশ ডাটা সেন্টার নিয়ে আলোচনা করব।
এখানে অনেকেই হয়তো ডাটা সেন্টার নিয়ে জানতে আগ্রহী কিংবা ডাটা সেন্টার কি সেটা শুনেছেন, কিন্তু এটা কিভাবে কাজ করে এই সম্পর্কে কোন আইডিয়া নেই।তো আমাদের ব্লগ পোস্টের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ডাটা সেন্টার সম্পর্কে বেসিক ধারণা প্রদান করা। আমি আশা করছি আমাদের এই ব্লগ পোষ্ট পড়ার পরে ডাটা সেন্টারের অনেক খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে আপনার জানা হয়ে যাবে। আপনি বুঝতে পারবেন ডাটাসেন্টার কি কাজে ব্যবহৃত হয় এবং ডাটা সেন্টার কিভাবে গড়ে তুলতে হয়। তাহলে আর দেরি না করে আসুন চলে যায় মূল কনটেন্টে।
ডাটা সেন্টার কি?
উদাহরণস্বরূপ বলা যায় আপনি যদি এখন ইউটিউবে গিয়ে যেকোনো একটা ভিডিও তে ক্লিক করেন তাহলে সেই ভিডিওটা মিলি সেকেন্ডের মধ্যেই প্লে হওয়া শুরু করবে। কিন্তু ওই ভিডিওটা তো আপনার কম্পিউটারের স্টোরেজে নেই। তাহলে এটা কিভাবে সম্ভব হচ্ছে?
এর সবচেয়ে সহজ উত্তর হচ্ছে, এই ভিডিওটা গুগলের একটা ডাটা সেন্টারে স্টোর করে রাখা আছে। নির্দিষ্ট ইউআরএল কিংবা লিংকের মাধ্যমে আমরা যখন ওইখানে একটা রিকুয়েস্ট পাঠাই কিংবা ক্লিক করি তখন গুগলের ডাটা সেন্টার আমাদের রিকোয়েস্ট করে ওই ভিডিওটা আমাদের সামনে প্লে করে।
অর্থাৎ আমরা ইন্টারনেটে কিংবা ওয়েবে যা কিছুই দেখি না কেন সমস্ত তথ্য সেটা ছবি হতে পারে ভিডিও হতে পারে কিংবা কন্টাক্ট হতে পারে সেটা কোন না কোন ডাটা সেন্টারে অনুরূপভাবে জমা করে রাখা আছে। এবং আমাদের রিকুয়েস্ট অনুযায়ী ওই তথ্যটা আমাদের সামনে ভিজুয়ালি চলে আসে।
ডাটা সেন্টারে মূলত অনেক বেশি তথ্য জমা থাকে। ডাটা সেন্টার তৈরি করা হয় বাণিজ্যিকভাবে। অর্থাৎ একটা কোম্পানির ডাটা সেন্টার তৈরি করে সেখানে যে স্টোরে আছো সেই স্টোরের বিভিন্ন অংশ ছোট ছোট বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিক্রি করে তাদের ওয়েবসাইট তৈরীর জন্য। আমরা সবাই ওয়েব হোস্টিং সম্পর্কে শুনেছি, ওয়েব হোস্টিং ডাটা সেন্টারের স্টোরেজেরই কিছু অংশ। যা আমরা আমাদের ওয়েবসাইটের বিভিন্ন কন্টেন্ট স্টোর করে রাখার জন্য ভাড়া নিয়ে থাকি।
ডাটা সেন্টারের ব্যবহার
এবার আমরা জানবো ডাটা সেন্টারের ব্যবহার সম্পর্কে। ডাটা সেন্টারের ব্যবহার খুবই ব্যাপক। ডাটা সেন্টার নানা ধরনের ব্যক্তিগত এবং বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বিশেষ করে যে কোন কোম্পানির যখন ইন্টারনেটে তাদের ইনিশিয়েটিভ শুরু করতে চায় তখন সবার আগে তাদের ইন্টারনেটে কিছু স্টোরেজের দরকার হয় যাকে আমরা ক্লাউড স্টোরেজ বলতে পারি। এখন ওই কোম্পানি যদি ছোট কোন কোম্পানি হয় তাহলে তারা কি করে, একটা বড় ডাটা সেন্টার কোম্পানির কাছ থেকে কিছু নির্দিষ্ট পরিমাণ স্টোরেজ ভাড়া নিয়ে নেয় কয়েক বছরের জন্য। এবং ওই স্টোরেজে তাদের কার্যক্রম শুরু করে দেয়।
ডাটা সেন্টার এখন অনেক সাধারন লেভেল পর্যন্ত মানুষ ব্যবহার করে থাকে। আপনি যদি গুগল ড্রাইভ ইউজ করে থাকেন, তাহলে আপনি গুগলের ডাটা সেন্টার ব্যবহার করছেন। এবং সেখানে ১৫ গিগাবাইট পর্যন্ত আপনার ডাটা ফ্রি-তে জমা রাখতে পারছেন।
Read More: সার্ভার কি? কত প্রকার ও কি কি এবং কিভাবে কাজ করে?
ডাটা সেন্টারের কাজ কি?
এখন আমরা জানবো ডাটা সেন্টারের কাজ গুলা কি কি সে সম্পর্কেঃ
ডাটা স্টোর রাখা
ডাটা সেন্টারের প্রধান এবং সবচেয়ে বড় কাজ হচ্ছে যেকোনো ধরনের ডাটা স্টোর করে রাখা। একই সাথে ইউজারের রিকুয়েস্ট অনুযায়ী তাকে নানাভাবে প্রসেস করা। যেমন কেউ ছাড়ে নতুন একটা ডাটা অ্যাড করবে কিংবা কেউ চাচ্ছে পুরনো একটা ডাটা ডিলিট করে দিবে, এই ধরনের যত প্রসেসিং এর কাজ আছে সব প্রসেসিং এর কাজ মূলত ডাটাসেন্টার করে থাকে। একটা কাজের জন্য আলাদা আলাদা এক্সটেনশন অ্যাড করে নিতে হয় ডাটা সেন্টারের সাথে।
ডাটা স্টোরেজের সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে গুগল ড্রাইভ।আ মরা প্রায় সবাই, গুগল ড্রাইভে আমাদের ডাটা জমা রাখি। আবার এমন অনেক ডাটা সেন্টার আছে, যেখান থেকে আমরা চাইলে কিছু টাকা দিয়ে অনেক বড় স্টোরেজ স্পেস কিনে রাখতে পারি।
ওয়েব সার্ভার হিসেবে কাজ করা
ডাটা সেন্টার ওয়েব সার্ভার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে অনেক বেশী। কারন ওয়েবে কোন কিছু রাখতে চাইলে, সেটাকে নির্দিষ্ট একটা সার্ভারে জমা রাখতে হবে, যে সার্ভারটা সর্বদা ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত থাকতে পারবে। সাধারন কম্পিউটার ওই রকম সার্ভার হিসেবে কাজ করতে পারে না। তাই আমাদের দরকার পরে ডাটা সেন্টার থেকে কিছু স্টোরেজ ভাড়া নিয়ে নেওয়া।
ইমেইল সার্ভার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া
ইমেইল আদান প্রদানের জন্য মুলত বড় ধরনের সার্ভারের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কেউ যখন বড় আকারে কোন ইমেইল ক্যাম্পেইন শুরু করে, তখন তার ওই ক্যাম্পেইন চালানোর জন্য ওয়েবে স্পেসের প্রয়োজন হয়। এই অবস্থায় ডাটা সেন্টার সবচেয়ে ভালো সমাধান দিয়ে থাকে।
অনলাইন গেমিং এক্সপেরিয়েন্সকে উন্নত করা
অনলাইনে এখন পাবজি, ফ্রি ফায়ার, COD সহ অনেক বড় আকারের গেম গুলো খেলা হয়ে থাকে। এই গেমের এক্সপেরিয়েন্স ভালো রাখতে এবং এতো বড় ডাটা গেমারদেরকে সার্ভ করতে, বিশাল বড় সার্ভার বা ডাটা সেন্টারের প্রয়োজন হয়। তো আধুনিক ডাটা সেন্টার এটা খুবই ভালোভাবে করে আসছে।
বড় আকারে ই-কমার্স পরিচালনায় সাহায্য করা
বড় আকারে যদি কেউ ই-কমার্স কিংবা অন্য ধরনের অনলাইন বিজনেস করতে চায়, তাহলে তার ডাটা সেন্টার খুবই জরুরি। সেখানে অনেক বড় আকারে ইউজার ডাটা এবং অন্যান্য দরকারি তথ্য স্টোর করে রাখা যাবে।
এই ছিলো ডাটা সেন্টার সম্পর্কে বেসিক গাইড। আশা করি, আপনি এখন ডাটা সেন্টার কি এবং এটা কি কি কাজে ব্যবহার করা হয়, সেটা সম্পর্কে ক্লিয়ার ভাবে বুঝেছেন।
Read More: Hard Disk এর Bad Sector কি, কেন, এবং করণীয়