ম্যালওয়্যার (Malware) হলো ‘Malicious Software’ এর সংক্ষিপ্ত রূপ৷ ‘Malicious’ অর্থ দূষিত বা ক্ষতিকর। অর্থাৎ ‘Malicious Software’ হলো দূষিত বা ক্ষতিকর সফটওয়্যার। যা আপনার ডিভাইসের ক্ষতিসাধন করে থাকে।
ম্যালওয়্যার এমন এক ধরনের সফটওয়্যার প্রোগ্রাম, যা আপনার কম্পিউটার, মোবাইল বা অন্য কোনো ডিভাইসে আপনার অনুমতি ছাড়াই তার কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারে। সেই কার্যক্রম হতে পারে আপনার গোপন তথ্য চুরি করা, আপনার উপর নজরদারি করা, আপনার ডিভাইসের কার্যক্ষমতা হ্রাস করা বা আপনার ডিভাইসে থাকা গুরুত্বপূর্ণ সব ডাটা সমূহের ক্ষতিসাধন করা। সহজ ভাষায় ম্যালওয়্যার একটি ক্ষতিকর সফটওয়্যার।
ম্যালওয়্যারের প্রকারভেদ
ম্যালওয়্যার মূলত বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে৷ তবে আমরা সচরাচর যে ম্যালওয়্যারগুলোর সম্মুখীন হয়ে থাকি সেগুলো হলো- ভাইরাস, ট্রোজন, র্যানসমওয়্যার, স্পাইওয়্যার, ওয়র্মস ইত্যাদি। এগুলো সম্পর্কে নিচে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো –
১. ভাইরাস:
ভাইরাস মূলত আপনার ডিভাইসে পেরালাইজড অবস্থায় থাকে। আপনি যখনি ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো প্রোগ্রাম রান করবেন তখনি এটি এক্টিভ হয়ে যাবে এবং নিজে নিজেই কাজ করা শুরু করবে। এটি মূলত নিজের প্রতিরূপ তৈরি করে ডিভাইসে থাকা অন্যান্য ডাটাসমূহকে অকেজো করে দিতে পারে।
২. ট্রোজন:
ট্রোজন মূলত অন্যান্য প্রোগ্রামের সাথে ছদ্মবেশে আপনার কম্পিউটারে প্রবেশ করতে পারে। এটি এমন এক ধরনের ম্যালওয়্যার, যা আপনার কাছে অত্যন্ত কার্যকরী, সুসংবদ্ধ ও আকর্ষণীয় রূপে নিজেকে উপস্থাপন করবে। আর আপনিও আপ্লুত হয়ে প্রোগ্রামটি ইন্সটল করে ফেলবেন। এই ট্রোজন ম্যালওয়্যারগুলো আপনার ডিভাইসে থাকা ডাটাসমূহকে ডিলিট, এডিট, মডিফাই করতে সক্ষম। এমনকি এটি আপনার ব্রাউজারে থাকা যাবতীয় পাসওয়ার্ডও চুরি করার ক্ষমতা রাখে।
৩. র্যানসমওয়্যার:
র্যানসমওয়্যার এমন এক ধরনের ম্যালওয়্যার ভাইরাস, যা আপনার কম্পিউটার ডিভাইসকে আক্রমন করে কম্পিউটারের হার্ড ড্রাইভে থাকা সবগুলো ফাইলকে এনক্রিপ্ট অর্থাৎ লক করে দিবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই ম্যালওয়্যারটি আপনার কম্পিউটারের সকল ফাইলকে এত বড় কী (Key) দিয়ে লক করে ফেলবে যে, তা প্রযুক্তিগতভাবে আনলক করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। এতে করে আপনি আর আপনার সেই ফাইলগুলোতে প্রবেশ করতে পারবেন না। আপনি যদি সেই ফাইলগুলোতে প্রবেশ করতে চান তাহলে আপনাকে উক্ত হ্যাকারকে মুক্তিপণ দিয়ে কী (Key) নিতে হবে।
Read More: র্যানসমওয়্যার কী? এই ভাইরাস থেকে বাঁচার উপায়
৪. ওয়র্মস:
এই ম্যালওয়্যারটি একবার যদি আপনার ডিভাইসে প্রবেশ করতে পারে তাহলে এটি আপনার ডিভাইসে নিজেকে গুণ করতে থাকবে। অর্থাৎ আপনার ডাটাগুলোকে কপি করে হাজার হাজার ফাইল তৈরি করবে। ফলে আপনার ডিভাইস স্লো হয়ে যাবে।
৫. স্পাইওয়্যার:
এর প্রধান কাজ হলো আপনার উপর নজরদারি করা এবং আপনার যাবতীয় গোপন তথ্য হ্যাকারের নিকট পৌঁছে দেওয়া।
যেভাবে আপনার ডিভাইসে ম্যালওয়্যার ঢুকতে পারে –
ম্যালওয়্যার বিভিন্ন উপায়ে আমাদের ডিভাইসে প্রবেশ করতে পারে। তবে এসবের পিছনে মূল ভূমিকায় থাকি আমরা নিজেরাই৷ কারণ আমাদের অসতর্কতার কারণেই ম্যালওয়্যার আমাদের ডিভাইসে ঢুকতে পারে। আসুন, ডিভাইসে ম্যালওয়্যার ঢোকার মাধ্যমগুলো জেনে নিই –
১. সফটওয়্যার ও সিস্টেম আপডেটে অবহেলা করা:
প্রত্যেকটি সফটওয়্যার বা সিস্টেমের কোনো না কোনো ত্রুটি বা বাগ থেকে যার ফলে হ্যাকাররা সহজেই যেকোনো ডিভাইসে আক্রমণ করতে পারে৷ তবে সময়ে সময়ে উক্ত সফটওয়্যার বা সিস্টেমের ডেভেলপারগণ সিকিউরিটি আপডেটের মাধ্যমে সেই ত্রুটি বা বাগ সমূহের সমাধান করার চেষ্টা করেন। অতএব আপনি যদি প্রতিটি আপডেটের পর আপনার সফটওয়্যার বা সিস্টেমের আপডেট না করেন তাহলে ওই সফটওয়্যার/সিস্টেমে থাকা ত্রুটি বা বাগ সমূহকে কাজে লাগিয়ে হ্যাকাররা আপনার ডিভাইসে ম্যালওয়্যার ঢুকিয়ে ক্ষতি করে থাকে।
২. অপরিচিত কোনো উৎস হতে পাওয়া মেইল বা ফাইল ওপেন করা:
প্রতিনিয়তই বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন ধরনের মেইল আসতে থাকে৷ আর আমরাও না বুঝে, না শুনে মেইল ওপেন করে ফেলি। অথবা কেউ কোনো লিংক/ফাইল দিলে কোনো কিছু চেক না করেই সেই লিংক/ফাইল ওপেন করে থাকি৷ হতে পারে সেই লিংক/ফাইল এমনভাবে তৈরি করা যে তা ওপেন করার সাথে সাথে ম্যালওয়্যার আপনার ডিভাইসে নিজ থেকে ইন্সটল হয়ে যাবে।
৩. ক্র্যাক সফটওয়্যার ব্যবহার করা:
ম্যালওয়্যারের আক্রমণের শিকার হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হতে পারে ফ্রিতে এই ক্র্যাক সফটওয়্যার ব্যবহার করার কারণে৷ আমাদের মধ্যে অধিকাংশই প্রয়োজনীয় সব সফটওয়্যার ইন্টারনেটের বিভিন্ন আনঅফিশিয়াল সোর্স থেকে ফ্রিতে ডাউনলোড করি৷ বিপত্তিটা সেখানেই! যেখানসেখান থেকে কোনো সফটওয়্যার ডাউনলোড করার সময়ই তার সাথে আমাদের ডিভাইসে চলে আসে বিভিন্ন ধরনের ম্যালওয়্যার। যা আমাদেরকে চরম মাত্রায় ভুগিয়ে থাকে।
ম্যালওয়্যার থেকে বাঁচতে করণীয়
বর্তমান সময়ে ম্যালওয়্যার আসলেই একটি ভয়ের কারণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে৷ বড় বড় টেক কোম্পানি থেকে শুরু করে ছোট ছোট কোম্পানিগুলো, এমনকি ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করা কম্পিউটার, স্মার্টফোনগুলোও ম্যালওয়্যারের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। তবে হ্যাঁ, আমরা সচেতন হলেই কোনো ম্যালওয়্যার বা হ্যাকার আমাদের ডিভাইস বা ডাটার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।
১. সর্বপ্রথম আপনার ডিভাইসের অপারেটিং সিস্টেম আপডেট রাখুন৷ এতে সে নিজের সুরক্ষা নিজেই করে নিতে পারবে৷ এক্ষেত্রে অটো-আপডেট অন রাখা অতিব জরুরি।
২. ম্যালওয়্যারকে ঠেকাতে সিকিউরিটি সফটওয়্যার ব্যবহার করাও অত্যান্ত জরুরি৷ যদিও বর্তমানে উইন্ডোজের নিজস্ব সিকিউরিটি সফটওয়্যার ‘উইন্ডোজ ডিফেন্ডার’ ব্যবহার করা হয়। এবং বর্তমানে এটি যথেষ্ট শক্তিশালী একটি সিকিউরিটি সফটওয়্যার। তারপরও অতিরিক্ত সুরক্ষার জন্য আপনি Eset, Norton, Kaspersky এর মতো সিকিউরিটি সফটওয়্যারগুলোর যেকোনো ওকটি ব্যবহার করতে পারেন।
৩. সচেতনতাই প্রতিরোধের পূর্বশর্ত। আমরা যদি সবসময় সতর্ক থাকি এবং সাইবার সিকিউরিটি ও ম্যালওয়্যার সম্পর্কে ভালো ধারনা রাখতে পারি তাহলে হ্যাকারদের ফাঁদে পড়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে আসে৷ বিশেষ করে কোনো লিংক, ফাইল বা মেইল ওপেন করার সময় সবচেয়ে বেশি সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। এছাড়াও কখন, কোথায় আপনি মেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করছেন সেটাও ভালোভাবে লক্ষ্য করে নিবেন।
৪. আমরা অনেকেই ইন্টারনেট থেকে ফ্রিতে ক্র্যাক ফাইল বা সফটওয়্যার ডাউনলোড করে থাকি৷ এটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ একটি কাজ। সবসময় চেষ্টা করবেন ট্রাস্টেড কোনো সোর্স হতে ফাইল বা সফটওয়্যার ডাউনলোড করতে। এবং ডাউনলোড করার পর তা ওপেন করার আগে অবশ্যই ফাইলটি স্ক্যান করে নিবেন। যা কোনো ম্যালওয়্যার সফটওয়্যারের সাথে আপনার ডিভাইসে ঢুকতে না পারে।
আবারও বলছি, সতর্কতার উপরে আর কিছু নেই। আপনি নিজে যদি সতর্ক না থাকেন তাহলে পৃথিবীর কোনো সিকিউরিটি সিস্টেমই আপনাকে ম্যালওয়্যার থেকে রক্ষা করতে পারবে না। অতএব নিজে সচেতন হোন, সুরক্ষিত রাখুন আপনার ডিভাইস ও আপনার মূল্যবান প্রতিটি ডাটা।
Read More: ডাটা রিকভারি কি, কেন এবং কিভাবে কাজ করে?
1 thought on “ম্যালওয়্যার কি? এর প্রকারভেদ এবং করনীয় কি বিস্তারিত জানুন”
ম্যালওয়্যার হলো ক্ষতিকর সফটওয়্যার যা কম্পিউটার, নেটওয়ার্ক বা ডিভাইসকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে ব্যবহৃত হয়। এটি ভাইরাস, ওয়ার্ম, ট্রোজান, স্পাইওয়্যার ইত্যাদির মাধ্যমে সিস্টেমে প্রবেশ করে তথ্য চুরি, ডেটা নষ্ট, বা নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়।