স্টুডেন্ট অথবা চাকরিজীবী, পরিবহন সুবিধার জন্য আজকাল সবাই ডেক্সটপ কেনার চেয়ে ল্যাপটপ কেনার প্রতিই বেশি আগ্রহ প্রকাশ করে৷ এছাড়াও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো ব্যাটারি ব্যাকআপ৷ যার ফলে লোডশেডিং হলেও ল্যাপটপে কাজ চালিয়ে যাওয়া যায়। যেটা ডেক্সটপের ক্ষেত্রে সম্ভব নয়।
তবে ল্যাপটপ ব্যবহারকারীদের সবচেয়ে বেশি যে সমস্যাটির সম্মুখীন হতে হয় তা হলো, ল্যাপটপ গরম হয়ে যাওয়া। আর ল্যাপটপ গরম হবার ফলে এর কার্যকারিতা অনেকটা কমে যায় অর্থাৎ কিছুটা স্লো হয়ে যায়৷ যা কাজের ক্ষেত্রে অত্যান্ত বিরক্তিকর একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়। অবশ্য এর জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা নিজেরাই দায়ী। আমাদের অলসতা ও অযত্নের কারণেই এমনটা হয়ে থাকে। অথচ একটু সাবধানতা অবলম্বন করলেই আমরা আমাদের ল্যাপটপটি ঠান্ডা রাখতে পারি।
সেদিন এক ছোট ভাই এসে বললো, “আধা ঘন্টা কাজ করার পরই তার ল্যাটপট এতোটাই গরম হয়ে যায় যে, তার রানের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।” আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করলাম, “ল্যাপটপ গরম হবার সাথে রানের অবস্থা খারাপ হওয়ার সম্পর্ক কী?” সে বলে, সে নাকি রানের উপর ল্যাপটপ রেখেই কাজ করে!
দেখুন তাহলে অবস্থা, রানের উপর ল্যাপটপ রাখতে তো তা গরম হবেই৷ কারণ অধিকাংশ ল্যাপটের কুলিং ফ্যানের যে বাতাস নির্গত হয়, সেটা নিচ দিয়ে অথবা সাইড দিয়ে বের হয়। কিন্তু রানের উপর ল্যাপটপ রাখার ফলে, রানের উপর থাকা কাথা, কম্বল বা পোষাকের কারণে বাতাস ঠিক মতো বের হতে পারে না। এবং কাথা ও কম্বল উঞ্চ জাতীয় বস্তু হওয়াতে তার সংস্পর্শে ল্যাপটপ আরো দ্রুত গরম হয়ে যায়। যদিও আরো বেশ কিছু কারণে ল্যাপটপ গরম হতে পারে।
ল্যাপটপ ঠান্ডা রাখার ৭টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস –
১. আপনার ল্যাপটপটি সবসময় পরিষ্কার রাখুন।
ল্যাপটপ ঠান্ডা রাখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টিপস হলো, ল্যাপটপটি সবসময় পরিষ্কার রাখা। এক্ষেত্রে কখনই অবহেলা করা যাবে না। কারণ আপনি আপনার ঘর যতই পরিষ্কার রাখুন না কেন, একটু করে হলেও প্রতিনিয়ত আপনার ল্যাপটপে ধুলোবালি প্রবেশ করবেই। আর ল্যাপটপের ভেতরে ধুলোবালি প্রবেশ করা মানেই আপনার ল্যাপটপকে ঠান্ডা রাখার জন্য যে কুলিং ফ্যান থাকে সেটির কার্যকারিতা কমে যায়। ফলে ল্যাপটপ সহজেই গরম হয়ে যায়।
এক্ষেত্রে আপনি একটি Compressed Air এর বোতল কিনে রাখতে পারেন। কদিন পর পর ল্যাপটপটি বন্ধ করে ধুলোবালি জমে থাকা জায়গাগুলো বাইরে থেকে পরিষ্কার করতে পারেন। এবং আপনার ল্যাপটপের ওয়ারেন্টি শেষ হয়ে গেলে ল্যাপটপের প্যানেল খুলে ভিতরেও পরিষ্কার করতে পারেন। অথবা সার্ভিস সেন্টার থেকেও পরিষ্কার করিয়ে আনতে পারেন। তবে তা অবশ্যই সাবধানতার সহিত করতে হবে এবং কিছু অংশ তুলো দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে৷ এতেই আপনার ল্যাপটপ গরম হয়ে যাওয়া থেকে অনেকটা রেহাই পাবে।
Read More: হার্ডডিস্ক ডাটা রিকভারি কি? কীভাবে এবং কোথায় করবেন?
২. চার্জিং ক্যাবল খুলে রাখুন।
অলসতা অথবা অজ্ঞতা, যাই বলুন না কেন; আমাদের অনেকের মধ্যে এই প্রবণতাটি দেখা যায়৷ ফুল চার্জ হবার পরও আমরা যতক্ষণ কাজ করি ততক্ষণই চার্জার লাগিয়ে রাখি। অনেক সময় কাজ না করলেও ল্যাপটপ চালু রাখার সাথে সাথে চার্জারও লাগানো থাকে৷ এতে করে ল্যাপটপের ব্যাটারি অতিরিক্ত চার্জ বহন করার ফলো তা গরম হয়ে যায়। ব্যাটারি গরম হবার ফলে ল্যাপটপটিও গরম হতে থাকে। আর শুধু গরমই না, এর ফলে ব্যাটারিও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এর কার্যকারীতা বা স্থায়ীত্ব দিন দিন কমতে থাকে।
তাই ফুল চার্জ হবার সাথে সাথে চার্জার ল্যাপটপ থেকে আনপ্লাগ করুন এবং চার্জ যখন শেষের পথে থাকবে অর্থাৎ ২৫% থেকে ৩০% এ নেমে আসে তখন আবার চার্জার লাগিয়ে দিন। আরেকটা কথা, কখনই ল্যাপটপ রাতে চার্জে লাগিয়ে রেখে দিবেন না। সারারাত চার্জার লাগিয়ে রাখার ফলে আপনার ল্যাপটপের বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।
৩. সমান্তরাল ও শক্ত স্থানে রেখে ল্যাপটপ ব্যবহার করুন।
বিছানায় শুয়ে-বসে, আরাম-আয়েশ করে কাজ করতে গিয়ে কেউ আবার আমার ওই ছোট ভাইয়ের মতো রান বা বিছানার উপর রেখে ল্যাপটপ ব্যবহার করতে যাবেন না। কারণ এতে আপনার ল্যাপটপের ভেতরে নিচ থেকে বা সাইড দিয়ে কোনো ধরনের বাসাত ঢুকতে বা বের হতে পারে না। ফলে ল্যাপটপ দ্রুত গরম হয়ে পড়ে৷
ল্যাপটপ রাখার সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা হলো সমান্তরাল ও শক্ত কোনো কিছুর উপর রাখা। সমান্তরাল কিন্তু নরম হলে চলবে না। এক্ষেত্রে টেবিলের উপর রেখে যাবতীয় কাজ করা সবচেয়ে উত্তম। এবং টেবিলটিও যেন সবসময় পরিষ্কার থাকে। আর ঘরের তাপমাত্রাও যেন প্রয়োজন অনুযায়ী ঠান্ডা থাকে।
৪. ল্যাপটপের জন্য কুলার স্ট্যান্ড ব্যবহার করুন।
ল্যাপটপ যেহেতু একটি ইলেক্ট্রিট ডিভাইস, বিদ্যুতের সাহায্যে চলে তাই এটি গরম হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে অস্বাভাবিক হারে গরম হওয়া থেকে রক্ষা পেতে হলে হলে কুলার স্ট্যান্ড হতে পারে অত্যান্ত ভালো একটি মাধ্যম।
ল্যাপটপ কুলার স্ট্যান্ড হলো ল্যাপটপ রাখার জন্য সমান্তরাল একটি স্ট্যান্ড। যার মধ্যে কুলার ফ্যান সংযুক্ত থাকে। ফলে এটি নিচ থেকে বাতাস সরবরাহ করে ল্যাপটপকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
৫. ল্যাপটপকে রেস্ট দেওয়া।
আমরা মানুষ বলে আমাদের রেস্টের প্রয়োজন আছে আর ল্যাপটপ ইলেক্ট্রিক ডিভাইস বলে তার রেস্টের প্রয়োজন নেই, এমনটা নয়। আমরা যে ভুলটা সচরাচর করে থাকি তা হলো, সকালে ঘুম থেকে উঠে ল্যাপটপ চালু করে সারাদিন গেম বা কাজ করে থাকি৷ এর মাঝে আমরা নিজেরা রেস্ট নিলেও ল্যাপটপকে রেস্ট দিই না।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে আমরা খাওয়া-দাওয়া করি, গোসল করি এছাড়াও আরো অনেক কিছু করি। সেই সময়টাই কিন্তু আমরা অনেকেই ল্যাপটপটি অফ করে রাখি না। ফলে আপনি কাজ না করা সত্ত্বেও ল্যাপটপটি ঠিকই চালু থাকে। কিন্তু আপনি চাইলেই এক মিনিট সময় নিয়ে ল্যাপটপটি অফ করে রাখতে পারেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে ২৫/৩০ মিনিট ল্যাপটপটি পুরোপুরি বন্ধ থাকলে এটি গরম হওয়া থেকে রক্ষা পায়। ফলে এর কার্যকারিতাও বৃদ্ধি পায়।
৬. অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার আনইন্সটল অথবা বন্ধ রাখুন
সবার আগে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে, আপনি যে কাজ করার জন্য বা যে ধরনের গেম খেলার জন্য ল্যাপটপটি কিনেছেন সেই কাজ করার মতো ক্যাপাসিটি আপনার ল্যাপটপটির আছে কিনা? কারণ কারো উপর অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করে কখনো ভালো ফলাফল পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে আপনার ল্যাপটপে থেকে অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার অর্থাৎ যেগুলো আপনার কখনই কাজে লাগে না, সেগুলো আনইন্সটল করে ফেলুন। এতে আপনার ল্যাপটপের প্রসেসরের উপর চাপ কমবে।
আর প্রসেসরের উপর যত চাপ পড়বে প্রসেসর ততই হিট হবে। তাই প্রসেসরের উপর চাপ কমাতে একই সাথে অনেকগুলো সফটওয়্যার ওপেন রাখবেন না। যখন যেটা প্রয়োজন তখন শুধু সেই সফটওয়্যারটিই চালু রাখবেন। এমনকি কোনো ব্রাউজার ব্যবহার করার সময়ও অপ্রয়োজনীয় কোনো ট্যাব ওপেন রাখবেন না। এটিও প্রসেসরের উপর চাপ বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করে।
৭. সেটিংস এর মাধ্যমে ল্যাপটপ নিয়ন্ত্রনে রাখা।
প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে আমাদের ল্যাপটপের সাথে অনেক ধরনের এক্সটার্নাল ডিভাইস যুক্ত থাকে। যা প্রসেসর ও ব্যাটারির উপর চাপ প্রয়োগ করে। তাই অপ্রয়োজনীয় ডিভাইস গুলো ডিসকানেকটেড রাখাই সবচেয়ে উত্তম। এবং অপ্রয়োজনে সিডি বা ডিভিডি ডিভাইসে না রাখা, ব্লুটুথ, ওয়াইফাই কানেকশন ইত্যাদি অপশনগুলো অপ্রয়োজনে বন্ধ করে রাখা উত্তম।
আর ল্যাপটপের ডিসপ্লে ব্রাইটনেস যতটা সম্ভব কম রাখা ভালো৷ এটি শুধু আপনার ল্যাপটপের জন্যই নয়, চোখের জন্য ভালো। আবার অনেক সময় ল্যাপটপ সাময়িক সময়ের জন্য কাজ অফ রাখতে গিয়ে আমরা স্ট্যান্ডবাই মুড অন রাখি৷ এতে করেও আমার ল্যাপটপ গরম হতে পারে। তাই এটি থেকে বিরত থাকুন। এর পরিবর্তে হাইবারনেশন মুড ব্যবহার করতে পারেন। যা আপনার ল্যাপটপকে ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করবে।
অতএব আপনার ল্যাপটপটিকে ঠান্ডা রাখতে হলে আপনাকেই সবচেয়ে বেশি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে৷ আপনি ল্যাপটপের যত বেশি যত্ন নিবেন এটি আপনাকে তত ভালো এবং দীর্ঘ সময় সার্ভিস দিয়ে যাবে৷ তাই যত্ন নিন আপনার ল্যাপটপের, কাজ করুন স্মুথলি এবং এরকম আরো ভালো ভালো টিপস পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।
Read More: হার্ডডিস্ক ভালো রাখার উপায় ৭ টি টিপস